ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন কিন্তু নিয়ম জানেন না? ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে কী কী কাগজপত্র লাগে, কত টাকা লাগে এবং কীভাবে একাউন্ট খুলতে হয় জানতে পারবেন এই পোস্টে।

ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের শীর্ষ সারির একটি ব্যাংক। এই ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট, কারেন্ট একাউন্ট, স্টুডেন্ট একাউন্ট সহ বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট করা যায়। দেশের সকল জায়গাতে রয়েছে অসংখ্য এটিএম।

ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চাইলে শেষ অব্দি পড়ুন।

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার

ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে বেশ কয়েক ধরনের অ্যাকাউন্ট সেবা প্রদান করা হয়। এগুলো হচ্ছে —

  • ডাচ বাংলা ব্যাংক ডিপোজিট প্লাস অ্যাকাউন্ট
  • কারেন্ট ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট
  • ডিবিবিএল স্কুল সেভার্স অ্যাকাউন্ট
  • ইন্টারেস্ট ফ্রি সেভিংস ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট
  • এক্সেল সেভিংস অ্যাকাউন্ট
  • সেভিংস ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট স্টান্ডার্ড
  • স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট

ডাচ বাংলা ব্যাংকে উপরোক্ত হিসাবগুলো খুলতে পারবেন। এই হিসাবগুলো খুলতে হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। কী কী কাগজপত্র লাগবে তা নিম্নরূপ।

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কী কী লাগে

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে একাউন্টের ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র লাগে। স্টুডেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে চাকুরীর প্রমাণপত্র ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।

অ্যাকাউন্ট খুলতে কী কী কাগজপত্র লাগবে তা নিচের তালিকায় উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে —

  • ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • নমিনির পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা এক কপি ছবি
  • ইউটিলিটি বিলের একটি কপি
  • সচল মোবাইল নাম্বার
  • ইনিশিয়াল ডিপোজিট এর ৫,০০০ টাকা
  • ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এর ডকুমেন্ট
  • চাকুরীজিবিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ডকুমেন্ট
  • স্টুডেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড
  • ই-টিন সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

এই ডকুমেন্টগুলো ছাড়াও ব্যাংক থেকে একাউন্টের ধরনের উপর ভিত্তি করে আরও কিছু ডকুমেন্ট চাওয়া হতে পারে। সেসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে

একাউন্টের উপর ভিত্তি করে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত লেগে থাকে। এই টাকা ব্লক মানি হিসেবে আপনার একাউন্টে থাকবে। একাউন্ট ক্লোজ করে দিলে উক্ত টাকা ফেরত পাবেন।

ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস ডিপোজিট প্লাস একাউন্ট খুলতে ব্লক মানি/ইনিশিয়াল ডিপোজিট হিসেবে ৫,০০০ টাকা জমা দিতে হয়। সেভিংস ডিপোজিট একাউন্ট স্টান্ডার্ড এর ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা ব্লক মানি/ইনিশিয়াল ডিপোজিট হিসেবে জমা দিতে হয়।

এক্সেল সেভিংস একাউন্ট খুলতে ৫০০ টাকা এবং ইন্টারেস্ট ফ্রি সেভিংস ডিপোজিট একাউন্ট খুলতে ৫,০০০ টাকা ব্লক মানি/ইনিশিয়াল ডিপোজিট হিসেবে জমা দিতে হয় একাউন্ট খোলার সময়।

কারেন্ট ডিপোজিট একাউন্ট খুলতে ১,০০০ টাকা এবং স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট একাউন্ট খুলতে ২,০০০ টাকা জমা দিতে হয়। ডিবিবিএল স্কুল সেভার্স একাউন্ট খুলতে ১০০ টাকা ইনিশিয়াল ডিপোজিট/ব্লক মানি হিসেবে জমা দিতে হয়।

ডাচ বাংলা ব্যাংকে আপনি কোন ধরনের একাউন্ট করতে চাচ্ছেন সেটি নির্ধারণ করার পর কত টাকা ডিপোজিট করতে হবে সেটি এখানে দেখতে পারবেন। সমপরিমাণ টাকা নিয়ে ব্রাঞ্চে গিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবেন।

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ব্রাঞ্চে যেতে হবে। নিকটস্থ ব্রাঞ্চে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাবমিট করুন। এরপর, আবেদন সম্পন্ন হলে ইনিশিয়াল ডিপোজিট এর টাকা জমা দিন। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে ডিবিবিএল একাউন্ট ওপেন করতে পারবেন।

ধাপ ১ — ব্রাঞ্চে যান

ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে হলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের নিকটস্থ ব্রাঞ্চে যেতে হবে। আপনার এলাকার কাছে কোথায় ব্রাঞ্চ আছে সেটি খুঁজে বের করুন। এরপর, ব্রাঞ্চে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা সহ উপস্থিত হন।

ধাপ ২ — ফরম পূরণ করুন

ব্রাঞ্চে দায়িত্বরত অফিসারের সাথে কথা বলে, তাকে জানান যে আপনি একটি একাউন্ট করতে চান। কী ধরনের একাউন্ট করতে চান, কত টাকা লেনদেন করবেন, কী কাজে ব্যবহার করবেন এসব কিছু জানাতে হবে।

আপনার পেশা সহ ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য জানতে চাইতে পারে। এরপর, অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। ফরম সঠিক তথ্য দিয়ে কাগজপত্রের তথ্যের সাথে মিল রেখে পূরণ করতে হবে। এজন্য, দায়িত্বরত অফিসারের নিকট থেকে ফরমটি পূরণ করে নিতে পারেন।

ধাপ ৩ — প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন

অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমটি সম্পূর্ণ পূরণ করা হয়ে গেলে একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন সকল তথ্য সঠিক আছে কিনা। এরপর, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো জমা দিন। সুন্দর করে সবগুলো ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে।

ধাপ ৪ — টাকা ডিপোজিট করুন

একাউন্টের ধরনের উপর ভিত্তি করে ইনিশিয়াল ডিপোজিট এর পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। স্টুডেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা এবং অন্যান্য একাউন্টের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা অব্দি ইনিশিয়াল ডিপোজিট করতে হয়।

মিনিমাম ডিপোজিট এর চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকাও ডিপোজিট করতে পারবেন। টাকা ডিপোজিট করে ডিপোজিটের রশিদ ফরমের সাথে যুক্ত করতে হবে।

ধাপ ৫ — আবেদন সম্পন্ন করুন

উপরের এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে এখন আবেদনটি সম্পন্ন করতে পারবেন। ব্রাঞ্চ থেকে যেসব তথ্য এবং কাগজপত্র চাওয়া হবে, সবগুলো জমা দিলে আবেদন সম্পন্ন হবে। আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে এসএমএস এর মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টের নাম্বার পেয়ে যাবেন।

ব্যাংক একাউন্টের নাম্বার পাওয়ার কিছুদিনের মাঝে চেকবই এবং ডেবিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। এগুলো পেয়ে গেলেই ডাচ বাংলা ব্যাংক ব্যবহার করে চাহিদামতো লেনদেন করতে পারবেন।

সারকথা

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে, কত টাকা লাগে এবং একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। যারা ডিবিবিএল এ একাউন্ট করতে চাচ্ছেন, তারা শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে একাউন্ট খোলার বিস্তারিত পদ্ধতি জানতে পারবেন।

FAQ

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং চার্জ কত?

ডাচ-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে নিজ আউটলেটে টাকা জমা এবং উত্তোলন সম্পূর্ণ ফ্রি। অন্য টেরিটরিতে টাকা জমা ও ফান্ড ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে ২ টাকা এবং উত্তোলন করার ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে ৪ টাকা চার্জ কাটবে।

ডাচ বাংলা ব্যাংকে সর্বোচ্চ কত টাকা রাখা যায়?

ডাচ বাংলা ব্যাংকে আপনার ইচ্ছেমতো টাকা রাখতে পারবেন। সঠিক ইনকাম প্রুফ এর ডকুমেন্ট দিয়ে একাউন্ট খোলা হলে ইচ্ছেমতো সেভিংস করতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *